বিজয় দিবস ২০১৯: সম্মেলক গানের বাণী ও শ্রবণ-নমুনা |
প্রকাশকাল: ১১ অগ্রহায়ণ ১৪২৬ |
ফিরে চল্, ফিরে চল্, ফিরে চল্ মাটির টানে—
যে মাটি আঁচল পেতে চেয়ে আছে মুখের পানে।
যার বুক ফেটে এই প্রাণ উঠেছে,
হাসিতে যার ফুল ফুটেছে রে,
ডাক দিল যে গানে গানে॥
দিক হতে ওই দিগন্তরে কোল রয়েছে পাতা,
জন্মমরণ তারি হাতের অলখ সুতোয় গাঁথা।
ওর হৃদয়-গলা জলের ধারা
সাগর-পানে আত্মহারা রে
প্রাণের বাণী বয়ে আনে॥
শ্রবণ নমুনা: ফিরে চল্, ফিরে চল্
নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়, খুলে যাবে এই দ্বার—
জানি জানি তোর বন্ধনডোর ছিঁড়ে যাবে বারে বার॥
খনে খনে তুই হারায়ে আপনা সুপ্তিনিশীথ করিস যাপনা-
বারে বারে তোরে ফিরে পেতে হবে বিশ্বের অধিকার॥
স্থলে জলে তোর আছে আহ্বান, আহ্বান লোকালয়ে—
চিরদিন তুই গাহিবি যে গান সুখে দুখে লাজে ভয়ে।
ফুলপল্লব নদীনির্ঝর সুরে সুরে তোর মিলাইবে স্বর—
ছন্দে যে তোর স্পন্দিত হবে আলোক অন্ধকার॥
জাগো অনশন-বন্দি, ওঠ রে যত
জগতের লাঞ্ছিত ভাগ্যহত!
যত অত্যাচারে আজি বজ্র হানি'
হাঁকে নিপীড়িত-মথিত-মন-জন-বাণী,
নব জনম লভি' অভিনব ধরণী ওরে ঐ আগত॥
আদি শৃঙ্খল সনাতন শাস্ত্র আচার
মূল সর্বনাশের, এরে ভাঙিব এবার।
ভেদি’ দৈত্য-কারা আয় সর্বহারা;
কেহ রহিবে না আর পর-পদ-আনত॥
নব ভিত্তি 'পরে —
নব নবীন জগত হবে উত্থিত রে!
শোন্ অত্যাচারী! শোন্ রে সঞ্চয়ী !
ছিনু সর্বহারা, হব সর্বজয়ী।
ওরে সর্বশেষের এই সংগ্রাম-মাঝ।
নিজ নিজ অধিকার জুড়ে দাঁড়া সবে আজ;
এই 'জনগণ-অন্তর-সংহতি’ রে
হবে নিখিল মানব জাতি সমুদ্ধত॥
বল্ নাহি ভয় নাহি ভয়!
বল্ মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!
তুই নির্ভর কর্ আপনার'
পর্ আপন পতাকা কাঁধে তুলে ধর্
ওরে যে যায় যাক্ সে, তুই শুধু বল্ 'আমার হয়নি লয়'!
বল্ 'আমি আছি', আমি পুরুষোত্তম, আমি চির-দুর্জয়!
বল্ মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!!
যে গেল সে নিজেরে নিঃশেষ করি'
তোদের পাত্র দিয়ে গেল ভরি'!
ঐ বন্ধ মৃত্যু পারেনি ক' তাঁরে পারেনি করিতে লয়!
তাই আমাদের মাঝে নিজেরে বিলায়ে সে আজি শান্তিময়
বল্ মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!!
ওরে রুদ্র তখনি ক্ষুদ্রেরে গ্রাসে আগেই যবে সে ম'রে থাকে ত্রাসে
ওরে আপনার মাঝে বিধাতা জাগিলে বিশ্বে সে নির্ভয়
এই ক্ষুদ্র কারায় কভু কি ভয়াল ভৈরব বাঁধা রয়?
বল্ মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!!
ওরে আত্ম-অবিশ্বাসী, ভয়ে-ভীত! কেন হেন ঘন অবসাদ চিত
বল্ পর-বিশ্বাসে পর-মুখপানে চেয়ে কি স্বাধীন হয়?
তুই আত্মাকে চিন্, বল 'আমি আছি' 'সত্য আমার জয়'!
বল্ মাভৈঃ মাভৈঃ, জয় সত্যের জয়!!
আমার দেশের মতন এমন দেশ কি কোথাও আছে
বৌ কথা কও পাখি ডাকে নিত্য হিজল গাছে।।
দোয়েল কোয়েল কুটুম পাখি বন বাদারে যায়রে ডাকি
আছে শাপলা শালুক ঝিলে বিলে, / পুকুর ভরা মাছে ।।
হাজার তারার মানিক জ্বলে, হেথায় মাটির ঘরে
সবার মুখের মিষ্টি কথায় সবার হৃদয় ভরে রে।
বুক জুড়ানো বঁধুর হাসি, রাখাল ছেলে বাজায় বাঁশি
আহা সব দুনিয়ার সেরা ও ভাই এ দেশ আমার কাছে॥
শ্রবণ নমুনা: আমার দেশের মতন এমন দেশ কি কোথাও আছে
ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা,
চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য
(আজ) কাঠফাটা রোদ সেঁকে চামড়া।।
চিমনির মুখে শোনো সাইরেন-শঙ্খ,
গান গায় হাতুড়ি ও কাস্তে___
তিল তিল মরণেও জীবন অসংখ্য
জীবনকে চায় ভালবাসতে।
শতাব্দী লাঞ্ছিত আর্তের কান্না
প্রতি নিঃশ্বাসে আনে লজ্জা;
মৃত্যু ভয়ে ভীরু বসে থাকা,আর নয়
পরো পরো পরো যুদ্ধের সজ্জা।
ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য
এসে গেছে ধ্বংসের বার্তা,
দুর্যোগে পথ হয় হোক দুর্ভেদ্য
চিনে নেবে যৌবন-আত্মা।।
আয়রে বাঙ্গালী আয় সেজে আয়, আয় লেগে যাই দেশের কাজে
দেখাই জগতে নহে ভেতো বাঙ্গালী, দাঁড়াইতে জানে বীর সমাজে।
বহুদিন পরে ডাক এসেছে আজ, ওরে বাঙ্গালী সাজ তোরা সাজ
এখনো নীরবে নাই কিরে লাজ / ধিক রে তোদের ক্ষাত্র তেজে
কোটি কণ্ঠে আজ জয় মা বলিয়া, দ্বেষ হিংসা আদি চরণে দলিয়া,
দাঁড়া রে বাঙ্গালী আপনা ভুলিয়া, সাজাই বাঙ্গলা নূতন সাজে
মাভৈঃ ওঠ্ রে ও বাঙ্গালী বীর, কতকাল রবি নত করি শির-
শুনেছি রে জয় বাঙ্গালী জাতির, অনাহত শব্দ ভেরীর মাঝে।।
শ্রবণ নমুনা : আয়রে বাঙ্গালী আয় সেজে আয়, আয় লেগে যাই দেশের কাজে
লাখো লাখো শহীদের রক্তমাখা
সবুজের বুকে লাল সূর্য আঁকা
আমাদের এই পতাকা ।।
আমাদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে
গৌরবে সৌরভে আকাশে ওড়ে
শান্তি কপোত যেন মেলেছে পাখা ।
সবুজের বুকে আছে সজীবতা প্রাণ
লালে ত্যাগ-শৌর্য-বীর্য মহান
শান্তি সুখে যেন অঙ্গরাখা।